একটি না পাওয়ার পরিচিত গল্প
আজকের চাঁদটা একটু বেশি সুন্দর দেখাচ্ছিলো, এই দেশে আজই তার শেষ রজনী বলে হয়তো। রাত ৩ টায় অমির ফ্লাইট, যেহেতু বিদেশে যাচ্ছে আর কবে কার সাথে দেখা হবে এই ভেবে আত্নীয়, প্রতিবেশী সবায় এসেছে অমিকে বিদায় দিতে। শেষ বারের মতো সকল জিনিসপত্র গুছাতে গুছাতে অমির ফোন বেজে উঠলো, একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসছে দেখলো সে! ফোন ধরা মাত্র ওই পার থেকে যার কন্ঠ আসলো সেটা শুনে অন্য একদিনের কথা অমির মনে পড়তে থাকলো।
বেশ
কিছুদিন আগে অমি তার অফিস শেষ করে বাড়ি ফিরছিলো, বাসায় ফিরে অমি তার আনুষঙ্গিক সকল
কাজকর্ম করে বিছানায় কেবল গা এলিয়ে দিলো, এর মধ্যে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়লো! ঘুম ভাঙ্গলো
যখন তার ফোন বেজে উঠলো, উঠতে উঠতেই কল কেটে গেলো। কে কল দিছে দেখতে দেখতেই কিছুক্ষণের
মধ্যে আরেকটি ফোন আসলো, দেখলো বন্ধু সাব্বির কল দিছে। কল ধরার পর ওইপার থেকে সাব্বির
অমিকে জানালো নেক্সট উইক তাদের বান্ধবী সারার বিয়ে, সারা অমিকে ফোন দিছিলো কিন্তু পাই
নাই বলে সাব্বিরকে জানাইছে এই সংবাদটা অমিকে পৌঁছে দিতে।
এ
সবকিছু ভাবতে ভাবতে ওই পার থেকে প্রশ্ন আসলো- ‘কেমন আছো? ফ্লাইট কয়টায়?’ হঠাৎ আসা এই
ফোন কলে অমি কিছুটা বিস্মিত হলেও উত্তর দিলো। এ দিকে হঠাৎ আসা এই ফোন অমিকে অনেক কিছু
মনে করিয়ে দিচ্ছে, কলেজে পড়াকালীন একটা সময় ছিলো যখন সারার সাথে নদীর ধারে সূযার্স্ত
না দেখলে অমির দিন পরিপূর্ণতা পেতো না! আর সাথে যদি ফুচকা বা চা থাকতো তাহলে আর কে
পায়। কতোদিন এমন গেছে যে প্রাইভেট শেষে হাঁটতে হাঁটতে পদ্মার চর ধরে দুইজনে অর্ধেক
শহর পাড়ি দিয়েছে!
কিশোর
বয়সের সহজাত ভালোলাগা বলতে যা বোঝায় আরকি! ফেলে আসা দিনের কথা চিন্তা করতে করতে ফোনের
ওইপারের আওয়াজ পরিবর্তন হয়, এই আওয়াজও অমির খুব চেনা- মাশরুক ভাইয়ের। বয়সে কিছুটা বড়
হলেও মাশরুক এবং অমি ছোটবেলা থেকেই একই সাথে বড় হয়েছে, এক স্কুলে তাদের পড়াশোনা। মাশরুক
দেশের সরকারী একটি মেডিক্যা্ল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা একজন ডক্টর এবং সারার হাজব্যান্ড।
বাকিটা সময় মাশরুকই অমির সাথে কথা বলে, তাদের কথাশেষে যখন মাশরুক ফোনটা সারাকে দিতে
চায় অমি তার ফ্লাইটের সময় হচ্ছে বলে কলটা কেটে দেয়।
রাত
গভীর হচ্ছে, মাশরুক ঘুমিয়ে পড়লেও সারা ঘুমোতে পারছে না। একা কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে,
এক সন্ধ্যার কথা সারার খুব মনে পড়ছে যেদিন তার সাথে অমির সামনাসামনি শেষবারের মতো দেখা
হয়েছিলো। সদ্য বাবা হারানো অমিকে সেদিন অন্য রকম দেখাচ্ছিলো, এতোটা বিদ্ধস্ত আগে কোনোদিনও
তাকে দেখে নাই সারা। সেদিন অনেক কথার মাঝেও অমিকে সারা সত্যটা বলতে পারে নি, বলতে পারে
নি একমাস পর মাশরুকের সাথে তার বিয়ের কথা।
আপাতত
নিজেকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে না পারার এই আত্নগ্ল্যানি বহন করতে পারবে কী না এই চিন্তায়
বিভোর সারা। তবে একটা মিথ্যা আশ্বাস যদি কারো দুঃখকে কিছুটা সাময়িক প্রশমণ দিতে পারে,
তাহলে হয়তো কোনো সত্যও সেই মিথ্যার চেয়ে পবিত্র হতে পারে না। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়-
সারা, অমির আশেপাশের মানুষ কিংবা মাশরুকের কাছে আখ্যায়িত ‘কিশোরবয়সের পাগলামি’ কী সত্যিই
বয়সের পাগলামী?
-১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
Comments
Post a Comment